বাংলাদেশি মিলনের সাইকেলে অন্নপূর্ণা জয়

স্পোর্টস ডেস্ক

পর্বত আরোহণ নিজেই এক দুঃসাহসিক কাজ, আর সাইকেল নিয়ে তা আরও কঠিন হয়ে যায়। তবে সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখিয়েছেন বাংলাদেশের সাইক্লিস্ট মোঃ তোজাম্মল হোসেন মিলন। তিনি সাইকেল নিয়ে পাড়ি দিয়েছেন তিলিকো লেক (বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ উচ্চতার হ্রদ), থরংলা পাস (বিশ্বের উচ্চতম পার্বত্য পথগুলোর একটি), অন্নপূর্ণা সার্কিট (বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ট্রেকিং রুট) ও অন্নপূর্ণা বেসক্যাম্প (হিমালয়ের অন্যতম আইকনিক বেসক্যাম্প)।

বুধবার (২ এপ্রিল) সকালে নেপাল সময় সোয়া ছয়টায় অন্নপূর্ণা বেসক্যাম্পে পৌঁছান মিলন। প্রায় ১৫ দিনের দীর্ঘ ও দুঃসাহসিক অভিযান শেষে ক্যাম্প স্পর্শ করে এখন ফেরার পথে রয়েছেন তিনি। নেপাল থেকে মিলন জানান, ‘১৭ মার্চ আমার এই অভিযাত্রা শুরু হয়। সাইকেল নিয়ে অন্নপূর্ণায় এর আগে মাত্র একজন—একজন ব্রিটিশ অ্যাডভেঞ্চার সাইক্লিস্ট গিয়েছিলেন গত মাসে। এরপর আমিই দ্বিতীয়। তবে একসঙ্গে চারটি পয়েন্ট প্রথম ব্যক্তি আমি।’

৮ এপ্রিল বিকেলে কাঠমান্ডু থেকে দেশে ফেরার কথা রয়েছে মিলনের। সমতলে ফিরে নেপাল ট্যুরিজম বোর্ডে অভিযানের সকল তথ্য ও ছবি উপস্থাপন করবেন তিনি। মিলন বলেন, ‘সাইকেল নিয়ে এতগুলো চূড়ায় একসঙ্গে অভিযানের দৃষ্টান্ত আগে নেই। যেহেতু আমিই প্রথম, আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির জন্য আমার ছবি ও ভিডিও নেপাল ট্যুরিজম বোর্ডে জমা দেব, যাতে বাংলাদেশি হিসেবে এই রেকর্ড স্বীকৃতি পায়।’

মিলন তার এই অর্জন একমাত্র মেয়ে মানহাকে উৎসর্গ করেছেন। তার মেয়ের বয়স মাত্র ২২ মাস। এত স্বল্প বয়সের সন্তানকে দেখে রেখে এই দুঃসাহসিক অভিযান করার কারণ সম্পর্কে বলেন, ‘পারিবারিক কারণে আমি এ রকম অভিযান করার বাড়তি তাড়না অনুভব করি।’ দুঃসাহসিক এই অভিযানের নাম দিয়েছেন, ‘সাইলেন্ট প্যাডেলস্ট্রম টু অন্নাপূর্ণা।’

দুর্গম পথে একা যাওয়াই কষ্টের। সেখানে ভারী সাইকেল নিয়ে এত উচ্চতায় উঠা বেশ দুরূহ। এ নিয়ে মিলন বলেন, ‘মানুষ তার সীমাবদ্ধতাকে জয় করতে চায়। আমার আগে থেকেই এ রকম পরিকল্পনা ছিল। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চেষ্টা করেছি।’

এই পথ পাড়ি দিতে অনেক মৃত্যুর ঝুকিও ছিল। সেই গল্প শোনালেন তিনই , ‘একটু অসাবধানতা হলেই বা বিশেষ কিছু ঘটলে জীবন নাশের ঝুঁকি থাকে। আমি মাঝে একটা দুর্ঘটনায় পড়েছিলাম। এতে বাম পায়ের হাটু বেশ আঘাতগ্রস্থ হয়। তিন দিন বেশ অসুস্থ ছিলাম। এরপরও অভিযান চালিয়েছি।’ দীর্ঘ অভিযানে খাবারের সঙ্কট হয় প্রচুর। আরোহীরা এত খাবার সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন না। কিছু পয়েন্টে খাবার থাকলেও দাম অনেক, ‘দু’টো ডিম ৬০০ রুপি দিয়েও খেয়েছি। খাবার অত্যধিক দামে ক্রয় করলে ফ্রি কটেজও পাওয়া যায়।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতক করেছেন মিলন। রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে শিক্ষকতা করেন। ব্যক্তিগত উদ্যোগেই তিনি সাইকেল নিয়ে অ্যাডভেঞ্চার করেন, ‘আমি ২০১৮ সালে খারদুকা পাস অভিযান করেছি। টেকনাফ থেকে লাদাখের ৭০ দিনের ট্রিপও দিয়েছি। সাইকেল নিয়ে রোমাঞ্চ আমার জীবনের অংশ।’

মিলনের চেষ্টাগুলোকে সাধুবাদ জানিয়ে জাতীয় পর্যায়ের সাইক্লিস্ট রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘তার কার্যক্রমগুলো আনুষ্ঠানিক খেলা বা প্রতিযোগিতার ফ্রেমওয়ার্কে পড়ে না কিন্তু এই উদ্যোগগুলো দেশের নামকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেশ বড় করে তোলে। এতে বিশ্বমঞ্চে আমাদের শারীরিক ও মানসিক দৃঢ়তা প্রকাশ পায়।’

ইউএ / টিডিএস

You may also like