শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে আগামীকাল শুরু হচ্ছে এশিয়ান জোনাল ৩.২ চ্যাম্পিয়নশিপ, যা দক্ষিণ এশিয়ান জোনের দাবার বিশ্বকাপ বাছাই টুর্নামেন্ট হিসেবে পরিচিত। ওপেন ও নারী বিভাগের চ্যাম্পিয়নরা সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পান। বাংলাদেশ বিগত কয়েকটি আসরে দুই বিভাগেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে এসেছে। তবে এবারই প্রথম বাংলাদেশ থেকে কোনো গ্র্যান্ডমাস্টার এই এশিয়ান প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন না।
বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তৈয়বুর রহমান সুমন বলেন, “গ্র্যান্ডমাস্টারদের অনুপস্থিতিতে একটু অস্বস্তি হলেও, এই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়ে আমরা সরাসরি বিশ্বকাপে খেলতে আসছি। যদি গ্র্যান্ডমাস্টাররা থাকতেন, তাহলে বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও আত্মবিশ্বাস আরও বেশি থাকত। ফাহাদ গতবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, নীড় ও তাহসিন সম্ভাবনাময়। ওপেন বিভাগে মূলত আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে, যাদের ২৪০০ রেটিংয়ের বেশি দাবাড়ু রয়েছে।”
বাংলাদেশের পাঁচ গ্র্যান্ডমাস্টারের মধ্যে জিয়াউর রহমান গত বছর জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে গিয়ে মারা যান, আব্দুল্লাহ আল রাকিব দীর্ঘ চার বছর ধরে দাবা থেকে দূরে, এনামুল হোসেন রাজীব পারিবারিক কারণে ইংল্যান্ডে অবস্থান করছেন, নিয়াজ মোর্শেদ ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক কারণে এই টুর্নামেন্টে খেলছেন না, এবং রিফাত বিন সাত্তারও পেশাগত কারণে অংশগ্রহণ করবেন না।
বাংলাদেশ ১৯৯৭ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপে অংশ নেয়, তবে কয়েকটি আসরে সুযোগ হয়নি। ২০০৭ সালে আবার সুযোগ পায়। ২০১১ সাল থেকে ভারত ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ান জোন আলাদা হয়ে যাওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ ওপেন বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে আসছে। গ্র্যান্ডমাস্টার রাজীব ও জিয়া একাধিকবার জোনাল চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন। তবে, জোনাল চ্যাম্পিয়ন না হলেও, বাংলাদেশকে অলিম্পিয়াডে শীর্ষ আশির মধ্যে থাকার ভিত্তিতে অন্য একটি কোটায় বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ থাকে।
এশিয়ান জোনাল টুর্নামেন্ট শুধু বিশ্বকাপ বাছাই নয়, এটি বাংলাদেশের দাবাড়ুদের জন্য একটি বড় সুযোগও। বিশেষ করে নন-রেটেড, ক্যান্ডিডেট ও ফিদে মাস্টারদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ। আন্তর্জাতিক মাস্টার খেতাব অর্জন করার সুযোগও রয়েছে এখানে। শ্রীলঙ্কার এই টুর্নামেন্টে সাকলাইন, নাইম হক ও উঠতি দাবাড়ুদের জন্য এটি একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারে।
নারী বিভাগের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দাবাড়ু আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার রাণী হামিদ, যিনি ৮১ বছর বয়সী। শ্রীলঙ্কায় আয়োজিত এই টুর্নামেন্টে নারী ও পুরুষ জাতীয় চ্যাম্পিয়নের বাইরে একমাত্র রাণী হামিদ অংশগ্রহণ করছেন। ওপেন ও নারী বিভাগ মিলিয়ে বাংলাদেশ থেকে ১২ জন দাবাড়ু খেলছেন, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই নিজের খরচে অংশ নিচ্ছেন। ফেডারেশন দুই জাতীয় চ্যাম্পিয়ন ছাড়া আরও তিনজনের বিমান খরচ বহন করেছে। গতকাল রাতে বাংলাদেশের দাবাড়ুরা কলম্বোর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন।