২৪ বছর পর সাফল্য পেল তিতাস

বাংলাদেশের দাবা অঙ্গনে তিতাস ক্লাব একটি সুপরিচিত নাম, যা ১৯৯৭ সাল থেকে লিগে অংশগ্রহণ করে আসছে। ২০০০ সালে প্রথম বিভাগে শিরোপা জয়ের পর, ২৪ বছর পর প্রিমিয়ার বিভাগে আবারও শিরোপা জিতেছে তিতাস ক্লাব। প্রিমিয়ার লিগের শেষ রাউন্ডে উত্তরা সেন্ট্রাল চেস ক্লাবকে পরাজিত করে ১৬ পয়েন্ট অর্জন করে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা।

তিতাস গ্যাসের অর্থায়নে পরিচালিত এই ক্লাবের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত আছেন সাবেক জাতীয় দাবাড়ু ফিদে মাস্টার সাইফ উদ্দিন লাভলু। ২০০০ সালের চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য ছিলেন তিনি, এবং ২৪ বছর পরের চ্যাম্পিয়ন দলেও তার উপস্থিতি রয়েছে। এবারের লিগে ছয় সদস্যের দলে তার নাম থাকলেও, মূলত ম্যানেজার ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

তিতাস ক্লাবের এবারের দলটি ছিল অভিজ্ঞ ও প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের সমন্বয়ে গঠিত। দলে ছিলেন গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোর্শেদ, ফিদে মাস্টার তাহসান তাজওয়ার জিয়া, আন্তর্জাতিক মাস্টার ফাহাদ রহমান, ফিদে মাস্টার সাকলাইন মোস্তফা সাজিদ এবং ভারতীয় আন্তর্জাতিক মাস্টার পানিসার বেদান্ত। তারা নয় রাউন্ডে ঘুরে ফিরে খেলেছেন। প্রতি রাউন্ডে চারজন করে খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করেছেন।

দুই যুগ পর শিরোপা জয়ে তিতাস ক্লাবের ম্যানেজমেন্ট বেশ সন্তুষ্ট। সাবেক জাতীয় দাবাড়ু ও তিতাস গ্যাসের সাবেক ডিজিএম লাভলু বলেন, “আমরা প্রতিবারই প্রিমিয়ার লিগে সম্মানজনক অবস্থানে থাকি। একাধিকবার রানার্স-আপ ও তৃতীয় হয়েছি। এবার আমাদের ম্যানেজমেন্ট গত বারের চেয়ে বাজেট বৃদ্ধি করে ১৫ লাখ করেছে। জাতীয় পর্যায়ের শীর্ষ দশ জন দাবাড়ুর মধ্যে চারজনকেই আমরা নিয়েছি এবং ভালো একজন বিদেশি এনেছি। আমাদের দলীয় শক্তি ছিল অনেক বেশি। পাশাপাশি বিমান এবার খেলেনি, পুলিশও বড় দল করেনি। দীর্ঘদিন পর চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় আমাদের ম্যানেজমেন্ট খুশি হয়ে দাবাড়ুদের সম্মানিত ও উৎসাহিত করবে, এতে বাজেট আরও বাড়বে।”

এবার তিতাসের হয়ে খেলেছেন উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোর্শেদ। দুই যুগ পর তিতাসকে চ্যাম্পিয়ন করাতে পেরে তিনি বলেন, “নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে একবার তিতাসে খেলেছিলাম। অনেক দিন পর আবার খেললাম এবং তিতাস চ্যাম্পিয়ন হলো। তিতাস অনেক দিন থেকেই দাবার সঙ্গে আছে। দীর্ঘদিন পর একটি বড় সাফল্য পেল। এটা অবশ্যই আনন্দের। এবারের লিগে জৌলুস কম হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে।”

প্রয়াত গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানের ছেলে তাহসিন তাজওয়ার জিয়াও খেলেছেন তিতাসের হয়ে। তিনি বলেন, “এটি আমার দ্বিতীয় লিগ শিরোপা। দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, এতে ভালো লাগছে। তবে আমি খুব বেশি ভালো খেলতে পারিনি। বাবা গত লিগে খেলেছে, এবার নেই। এটা ভেবে খুব খারাপ লাগছে।”

আজ বিকেলে চ্যাম্পিয়ন দলকে ট্রফি হস্তান্তর করবে দাবা ফেডারেশন। তবে এই লিগে কোনো অর্থ পুরস্কার নেই। গ্রেট ওয়াল সিরামিকের নাম পৃষ্ঠপোষক হিসেবে থাকলেও, সেটি শুধুমাত্র আরবিটার ও অন্যান্য ব্যয় মেটানোর জন্য। ২০২৪ সালে লিগ হয়নি, তাই এই বছর দুটি লিগ আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে ফেডারেশনের নতুন কমিটির। সেই যুক্তিতে বছরের শেষের দিকে লিগে অর্থ পুরস্কারের আশ্বাস রয়েছে দাবাড়ুদের প্রতি।

ফেডারেশন থেকে আর্থিক পুরস্কার না থাকায়, ক্লাবগুলো থেকেও সম্মানী ছিল কম। ফলে অনেক ভালো দাবাড়ু এবার দল পাননি। দল সংখ্যা কম হওয়ায় এবং অনেক ভালো দাবাড়ু খেলতে না পারায় এবারের লিগের মান ও আকর্ষণ কম ছিল। ফেডারেশনের নতুন কমিটির জন্য এটি খানিকটা বিব্রতকর।

You may also like